খেলাধুলা ডেস্ক কোনো এক অজানা কারণে মেয়েদের লিগ না খেলার সিদ্ধান্ত নেয় বসুন্ধরা কিংস। তাতে মেয়েদের লিগ ঘিরে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্ডার মতো নারী জাতীয় দলের এক ঝাঁক তারকা হয়ে যান দলহীন। তার পরও ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত দলবদলের তারিখ ঘোষণা করে বাফুফে নারী ফুটবল কমিটি। দেশের নারী ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর ঘিরে শঙ্কা আরও বেড়ে যায়, যখন দলবদল শুরুর পরও ২৫ দিনে কোনো ক্লাব ফুটবলার নিবন্ধন করেনি। এর পর ২৭ দিন বাড়িয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয় দলবদলের সময়।
গতকাল শেষ দিনে এসে সাবিনা-সানজিদারাও তাদের নতুন ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন। দুঃসময়ে জাতীয় দলের ফুটবলারদের পাশে দাঁড়িয়েছে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি। রোববার শামসুন্নাহার জুনিয়র, শামসুন্নাহার সিনিয়র, ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা, মাসুরা পারভীন, শিউলি আজিম, মারজিয়া আক্তার, আনাই মুগিনি, মাতসুসিমা সুমাইয়া, কৃষ্ণা রানী সরকার, নিলুফার ইয়াসমীন নিলা, রুপনা চাকমারা মেয়েদের লিগের নতুন মৌসুমের জন্য নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এপ্রিলে শুরু হওয়ার কথা মেয়েদের লিগ।
গত কয়েক মৌসুম বসুন্ধরা কিংসের কারণে বড় অঙ্কের অর্থ পেয়েছিলেন সাবিনারা। এবার কিংস না থাকায় হয়তো সেই পরিমাণ অর্থ তাদের দেবে না নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি। কারণ এই ক্লাবটির যাত্রাই হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে। ক্রীড়াঙ্গনের তৃণমূলে নারী সংগঠক হিসেবে পরিচিত নাসরিন আক্তার বেবি ফুটবল, হ্যান্ডবলসহ একাধিক খেলায় দল গঠন করেন। নাসরিন আক্তার বেবি বাফুফে নারী কমিটির সদস্য। নিজের নামে এই ক্লাব করা বেবি ১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্রের মহিলা সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্র পাইওনিয়ার ফুটবল খেলত। সেখান থেকে তৃতীয়, দ্বিতীয় এবং প্রথম বিভাগেও খেলছে এ ক্লাবটি। বড় খেলোয়াড়রা ওপরের স্তরের প্রতিযোগিতায় খেললেও ছোটরা খেলা থেকে বঞ্চিত হতো। তাই ছোট বাচ্চাদের খেলানোর জন্য ২০০০ সালে নিজের নামে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি চালু করেন বেবি। ওই বছর ছেলেদের পাইওনিয়ার ফুটবলে খেলেছিল ক্লাবটি। ২০০৩ সালে মেয়েদের ফুটবলের যাত্রা করলেও লিগ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। তখন থেকেই মেয়েদের লিগে খেলে আসা নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি ২০১৯-২০ মৌসুমে রানার্সআপ হয়েছিল। এবার শক্তিশালী দল গঠন করায় শিরোপার বড় দাবিদার তারা।
এত বড় দল করার পর নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি ঠিকমতো পারিশ্রমিক দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। মেয়েদের পারিশ্রমিকের অঙ্ক নিয়ে খোলাসা করে কিছু না বললেও দু’পক্ষের সমঝোতায় চুক্তি হয়েছে বলে গতকাল জানান নাসরিন ফুটবল একাডেমির এ কর্ণধার, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, আর তারাও সন্তুষ্ট হয়েছে। ফলে তারা রাজি হয়েছে। আমাদের ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে কিছু স্পন্সরের চেষ্টা করছি। হয়তো পেয়ে যাব। আর আমাদের যারা কর্মকর্তা আছেন, তারা সবাই সহযোগিতা করবেন বলে বিশ্বাস করি।’ ক্লাবটি নাসরিন আক্তার বেবির হলেও এটার মূলে আছেন বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। মূলত তাঁর কথায় সাবিনাসহ জাতীয় দলের তারকারা নাসরিন একাডেমিতে খেলতে রাজি হয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে। যেহেতু মেয়েরা বাফুফের ভবনে আবাসিক ক্যাম্পেই থাকেন, তাই থাকা-খাওয়ার জন্য বাড়তি অর্থ খরচ হবে না এ ক্লাবটির।
এবারের নারী লিগে ৯টি ক্লাব অংশ নিচ্ছে। আর্মি স্পোর্টস ক্লাব খেলার কথা ছিল না। রোববার শেষ দিনের শেষ মুহূর্তে তারা দলবদলে অংশ নেয়। বাকি আট ক্লাবের মধ্যে শুধু প্রতিষ্ঠিত ক্লাব ফরাশগঞ্জ। বাকি দলগুলো হলো–আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব, উত্তরা ফুটবল ক্লাব, সিরাজ স্মৃতি সংসদ, সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাব, জামালপুর কাচারীপাড়া একাদশ, ঢাকা রেঞ্জার্স ফুটবল ক্লাব।